একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের শহরগুলোর বায়ুদূষণ বিশ্বে শীর্ষস্থানে রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর বায়ু মান শঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে
২০২৩ সালে বাংলাদেশের বায়ু মানের পরিস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ ধারণ করেছে। বিশেষ করে ঢাকার মতো বৃহত্তম শহরগুলোতে বায়ুদূষণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করেছে। ২০২৩ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাংলাদেশে বায়ু দূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বায়ুদূষণের কারণ:
বায়ুদূষণের প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- যানবাহনের বর্জ্য: বিশেষত ডিএসএল গ্যাস এবং ডিজেল চালিত যানবাহনের অত্যধিক ব্যবহারের কারণে বায়ুতে কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড এবং সালফার ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- কারখানার বর্জ্য: বিভিন্ন শিল্পকারখানার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বায়ু দূষণকারী গ্যাস বেরিয়ে আসছে।
- ধুলাবালি ও নির্মাণ কাজ: রাজধানী ঢাকায় চলছে ব্যাপক নির্মাণকাজ, যা বায়ুর মধ্যে ধুলাবালি ছড়িয়ে দেয় এবং দূষণ বাড়িয়ে তোলে।
- কৃষি আগুন: কৃষি জমিতে আগুন দেয়া, বিশেষ করে ধান কাটার পরের সময়ে, বায়ুতে প্রচুর পরিমাণে ধোঁয়া এবং সুনির্দিষ্ট দূষণকারী পদার্থ ছড়ায়।
বায়ু মান সূচক (AQI) এর তথ্য:
২০২৩ সালে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং অন্যান্য বড় শহরের বায়ু মান সূচক (AQI) প্রায়ই ‘অতি দূষিত’ (Hazardous) অবস্থায় পৌঁছেছিল। বিশেষ করে শীতকালে, যখন তাপমাত্রা কমে যায়, বায়ু দূষণের মাত্রা বাড়ে। ঢাকার AQI একাধিক বার ৩০০ বা তার বেশি পৌঁছায়, যা ‘অতি বিপজ্জনক’ স্তরে পরিণত হয়।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি:
বায়ু দূষণের কারণে শ্বাসযন্ত্রের রোগ, হৃদরোগ এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং রোগী ব্যক্তিদের জন্য এ ধরনের দূষণ অত্যন্ত ক্ষতিকর। দূষিত বায়ু শ্বাসযন্ত্রের প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, যা দীর্ঘমেয়াদী রোগ সৃষ্টি করতে সহায়ক।
প্রতিক্রিয়া ও উদ্যোগ:
বায়ুদূষণের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সংস্থা বায়ু মান নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে, যেমন:
- যানবাহনের জন্য পরিবেশবান্ধব ইঞ্জিন এবং জ্বালানি ব্যবহার।
- শিল্প কারখানাগুলোর জন্য কঠোর পরিবেশগত নিয়মাবলী।
- বৃক্ষরোপণ এবং সবুজ বেষ্টনী তৈরির উদ্যোগ।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সুষ্ঠু পরিবেশ ব্যবস্থাপনা এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের বায়ু দূষণের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।