ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এ আন্দোলন দমনে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার যে হত্যাকাণ্ড চালায়, তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে করার উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার।
পাশাপাশি এ আইনে বিগত আওয়ামী লীগ আমলে যে গুম, খুনের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তারও বিচার করার উদ্যোগ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে আইনটি সংশোধন করল সরকার।
এর আগে গত বুধবার এ আইনের সংশোধনের খসড়ায় অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ।
প্রেক্ষাপট
সংশোধিত অধ্যাদেশের মূল দিক
গেজেটে যেসব সংশোধনী প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো:
- বিচার প্রক্রিয়ার মান উন্নয়ন:
- সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ এবং উপস্থাপনে নতুন নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করে সাক্ষ্য গ্রহণের পদ্ধতি সহজতর করা হয়েছে।
- বিচারের স্বচ্ছতা:
- অভিযুক্ত ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি আরও জোরদার করা হয়েছে।
- ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক আইনি মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রাখা হয়েছে।
- জরুরি মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি:
- দীর্ঘসূত্রিতা কমিয়ে মামলার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করার জন্য বিশেষ শাখা গঠন।
- তদন্ত প্রক্রিয়া শক্তিশালীকরণ:
- তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন টিমকে আরও কার্যকর করতে প্রয়োজনীয় বিধান যোগ করা হয়েছে।
- আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
- নতুন অপরাধ অন্তর্ভুক্ত:
- বিদ্যমান অপরাধের তালিকায় নতুন কিছু মানবতাবিরোধী অপরাধ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংশোধনের পেছনের কারণ
- আইন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন: বর্তমান সময়ের প্রয়োজন অনুযায়ী আইনের বিভিন্ন ধারা আধুনিক করা জরুরি।
- আন্তর্জাতিক সমর্থন: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো।
- মানবাধিকার নিশ্চিতকরণ: অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মানবাধিকার রক্ষায় আইন আরও শক্তিশালী করা।
- নিয়মিত সমালোচনার উত্তর: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে সময় সময় সমালোচনা হয়েছে। সংশোধিত অধ্যাদেশ এসব সমালোচনার উত্তর হিসেবে কাজ করবে।
এই সংশোধনের প্রভাব
আইনগত প্রভাব:
- বিচারব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা বাড়বে।
- মামলার দীর্ঘসূত্রিতা কমে যাবে।
- ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় থাকবে।
সামাজিক প্রভাব:
- ভুক্তভোগী পরিবারদের মধ্যে আস্থা বাড়বে।
- মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে নতুন উদ্যম সৃষ্টি হবে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব:
- বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসিত হবে।
- মানবাধিকার রক্ষায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি আরও সুসংহত হবে।
চ্যালেঞ্জসমূহ
সংশোধিত অধ্যাদেশ কার্যকর করার ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ থাকতে পারে:
- অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ: অনেক ক্ষেত্রে অপরাধের সাক্ষ্য-প্রমাণ সংরক্ষণ করা কঠিন।
- রাজনৈতিক প্রভাব: বিচার প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা রয়েছে।
- আন্তর্জাতিক চাপ: কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বা রাষ্ট্রের আপত্তি বা সমালোচনার মুখোমুখি হতে পারে।
করণীয়
সংশোধিত অধ্যাদেশ কার্যকর করতে সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপ নিতে হবে:
বিচারকদের প্রশিক্ষণ: সংশোধিত অধ্যাদেশের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিচারকদের প্রশিক্ষণ প্রদান।
প্রযুক্তি ব্যবহারের উন্নয়ন: তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা।
জনসচেতনতা বৃদ্ধি: সংশোধিত অধ্যাদেশ সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম আরও উন্নত করা।