বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানসহ তাঁর পরিবারের আট সদস্যের বিদেশে থাকা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গত ২১ নভেম্বর এ আদেশ দেন।
সম্পদ জব্দের আদেশের তালিকায় নাম থাকা অন্যরা হলেন আহমেদ আকবর সোবহানের স্ত্রী আফরোজা বেগম, তাঁদের তিন ছেলে সায়েম সোবহান আনভীর, সাফিয়াত সোবহান ও সাফওয়ান সোবহান এবং তিন পুত্রবধূ সাবরিনা সোবহান, সোনিয়া ফেরদৌসী সোবহান ও ইয়াশা সোবহান। দুদক আদালতকে এই আটজনের প্রায় ১৪৩ কোটি টাকার বিনিয়োগ, সম্পদ কেনা ও ব্যাংকে লেনদেনের তথ্য জানিয়েছে। এর বাইরে বিদেশে সম্পদ কেনা, বিনিয়োগ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য দেওয়া হয়েছে, যেগুলোর টাকার পরিমাণ দুদকের প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
দুদক বলছে, আহমেদ আকবর সোবহানের পরিবারের কেউ বিদেশে টাকা পাঠাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেননি।
অনুসন্ধানের পটভূমি
দুদকের মতে, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকদের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার এবং অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে আসছে।
- অভিযোগ রয়েছে, বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকরা বিভিন্ন দেশের ব্যাংক এবং রিয়েল এস্টেট খাতে অবৈধ সম্পদ বিনিয়োগ করেছেন।
- বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে দুদক এই সম্পদ জব্দের উদ্যোগ নেয়।
- এই অনুসন্ধান আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে দুর্নীতি বিরোধী চুক্তি অনুসারে পরিচালিত হচ্ছে।
সম্পদ জব্দের কারণ
- অবৈধ অর্থপাচার:
- বিদেশে সম্পদ কেনা-বেচার ক্ষেত্রে দেশের আইনি নীতিমালা লঙ্ঘন।
- অর্জিত অর্থের উৎস নিয়ে স্বচ্ছতার অভাব।
- দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ:
- সরকারি এবং বেসরকারি প্রকল্প থেকে অর্থ আত্মসাৎ।
- ট্যাক্স ফাঁকি এবং করফাঁকি দিয়ে অর্জিত সম্পদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ।
- জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি:
- অর্থপাচার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ হ্রাস করে।
- বৈধ উপায়ে অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়।
দুদকের পদক্ষেপ
- তথ্য সংগ্রহ:
- আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা এবং বিভিন্ন দেশের গোয়েন্দা বিভাগ থেকে তথ্য সংগ্রহ।
- বিদেশে থাকা সম্পত্তির তালিকা প্রস্তুত।
- জব্দের নির্দেশ:
- বিদেশি ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বসুন্ধরা গ্রুপের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার অনুরোধ।
- আন্তর্জাতিক সম্পত্তি এবং বিনিয়োগ স্থগিত করার আদেশ।
- বৈশ্বিক সহযোগিতা:
- আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়।
- অর্থপাচার রোধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গঠন।
প্রভাব
অর্থনৈতিক প্রভাব:
- অবৈধ অর্থপাচারের বিরুদ্ধে সরকারের শক্ত অবস্থান প্রমাণিত হবে।
- বৈদেশিক মুদ্রার উপর চাপ হ্রাস পাবে।
- অর্থনীতির স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে।
আইনগত প্রভাব:
- দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি কঠোর বার্তা যাবে।
- উচ্চপদস্থ ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি তদন্তে জবাবদিহিতার নজির স্থাপন হবে।
সামাজিক প্রভাব:
- জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার এবং দুর্নীতি দমন বিষয়ে আস্থা বাড়বে।
- সমাজে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হবে।
চ্যালেঞ্জ
- আন্তর্জাতিক জটিলতা:
- বিভিন্ন দেশের আইনি কাঠামোর মধ্যে এই সম্পদ জব্দ করা একটি সময়সাপেক্ষ এবং জটিল প্রক্রিয়া।
- আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পূর্ণ সহযোগিতা পাওয়া নিশ্চিত করা।
- রাজনৈতিক চাপ:
- প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়া সবসময়ই কঠিন।
- রাজনৈতিক এবং সামাজিক চাপ মোকাবিলা করা।
- সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহ:
- অবৈধ সম্পদ অর্জনের যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করা।
- সম্পদ এবং অর্থের প্রকৃত উৎস শনাক্ত করা।
করণীয়
সাধারণ জনগণকে সচেতন করা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনগণকে সম্পৃক্ত করা।
বৈশ্বিক সমন্বয়: বিদেশি সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমঝোতা বৃদ্ধি করা।
আইনগত কাঠামো শক্তিশালীকরণ: অর্থপাচার এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোর করা।
প্রযুক্তি ব্যবহার: সম্পদের উৎস অনুসন্ধানে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা।