অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধর্মীয় সহিংসতা রোধে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ এবং সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছে
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং সংবেদনশীল বিষয়। বহুত্ববাদী সংস্কৃতি এবং বহুধর্মীয় জনগোষ্ঠী নিয়ে গঠিত এ দেশের রাজনীতি সবসময়ই ধর্মীয় সহাবস্থানের একটি মডেল তৈরি করার চেষ্টা করে আসছে। বাংলাদেশের সংবিধান ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা প্রদান করেছে, যা দেশের সকল ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখার একটি শক্তিশালী ভিত্তি।
বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সহাবস্থান দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে এই দেশ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। সেই সময় থেকেই দেশের রাজনীতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির গুরুত্ব গভীরভাবে অনুভূত হয়েছে।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিটি সরকার জাতীয় অনুষ্ঠানে, যেমন: ঈদ, পূজা, বড়দিন এবং বৌদ্ধ পূর্ণিমা, সকল ধর্মীয় উৎসবে রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করে আসছে। এর ফলে সমাজে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সম্প্রীতির একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে।
তবে, কিছু সময়ে ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করার প্রবণতা দেখা গেছে, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে দায়িত্বশীল নেতৃত্ব এবং সুশীল সমাজের ভূমিকা অপরিহার্য। ধর্মীয় সহিংসতা বা বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা মোকাবেলা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সমন্বিত প্রচেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ সরকার একাধিক কর্মসূচির মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা এবং উন্নয়নের চেষ্টা করছে। যেমন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ পালন, মন্দির, মসজিদ এবং গির্জাগুলোর সংস্কার ও উন্নয়নে আর্থিক সহায়তা প্রদান, এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে মনোযোগ প্রদান।
বাংলাদেশের জাতীয় রাজনীতি এবং সামাজিক কাঠামোতে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতি শুধু রাজনৈতিক প্রয়োজন নয়, বরং এটি দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি এবং উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে সকল নাগরিক এবং রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সহমর্মিতার চর্চা করতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্থিতিশীল এবং শান্তিপূর্ণ সমাজ গড়ে তুলতে হলে ধর্মীয় সম্প্রীতির চেতনাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।
এভাবেই, বাংলাদেশ তার জাতীয় রাজনীতিতে ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রতিশ্রুতি ধরে রেখে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমৃদ্ধশালী জাতি হিসেবে এগিয়ে চলবে।